শেয়ালে খায়নি, বিক্রি হয়েছে কুমিরের ৫৫ বাচ্চা

হঠাৎ করে রাতের আঁধারে করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্র থেকে কুমিরের বাচ্চা উধাও হয়ে যাওয়ার খবর নিয়ে ধামাচাপা চলছে বন বিভাগের মধ্যে। বন বিভাগের দাবি কুমিরের বাচ্চাগুলো শেয়ালে খেয়েছে। কিন্তু পরিবর্তন ডটকমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুমিরের বাচ্চা শেয়ালে খায়নি, বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা কুমির পালনকারী এক প্রাইভেট ফার্মে বাচ্চাগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন।‘ গত দেড় মাস আগে কোনো এক প্রাইভেট কোম্পানির পক্ষ থেকে একব্যক্তি মোটা অর্থের বিনিময়ে কুমিরের বাচ্চা কিনতে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ডিএফও সাইদুল ইসলামের  কাছে যান।’

তবে তিনি সেখানে ব্যর্থ হয়ে করমজলে কর্মরত মাহাবুব, তৌহিদ, জাকিরের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজন (পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক) বৃহস্পতিবার মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানিয়েছেন।

গত ২৯ জানুয়ারি করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে থেকে ৫৫টি কুমিরের বাচ্চা উধাও হয়।

সূত্রটির ধারণা ওই ব্যাক্তিই বন বিভাগের সাথে আঁতাত করে কুমিরের বাচ্চাগুলি সরিয়েছে। শিয়ালে কুমিরের বাচ্চা নিয়েছে এটা গল্প বলে মন্তব্য করেন সূত্রটি।

এদিকে পরিবর্তন ডটকমে কুমিরের বাচ্চা উধাও নিয়ে খবর প্রকাশের পর করমজলের ইনচার্জ তৌহিদুল ইসলামের ফোন বন্ধ রয়েছে। এছাড়া চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেদী জামান ফোন রিসিভ করছেন না। অনেক চেষ্টা করে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও ) মো. সাইদুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি তদন্ত কমিটির দোহাই দিয়ে ফোনটি কেটে দেন। এর আগে ডিএফও বলেন চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মেহেদী জামানকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তাই  কুমিরের বাচ্চা কিনতে আসা লোকটি কে জানা হলো না।

বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির নোনা পানির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও তা সংরক্ষণে ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্রে বন বিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র সরকারি এ কুমির প্রজননকেন্দ্র। বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন প্রকল্পের আওতায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে আট একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় কেন্দ্রটি।

শুরুতেই জেলেদের জালে ধরা পড়া ছোট-বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে কেন্দ্রে প্রজনন কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে কেন্দ্রে মিঠা পানির দুটি নারী কুমির, নোনা পানির দুটি নারী কুমির—জুলিয়েট ও পিলপিল এবং একটি পুরুষ কুমির রোমিও রয়েছে।

কেন্দ্রের সাবেক কর্মকর্তা ও কুমির বিশেষজ্ঞ আবদুর রব জানান, বাংলাদেশে তিন প্রজাতির কুমিরের অস্তিত্ব ছিল। লবণ পানির কুমির, মিঠা পানির কুমির ও গঙ্গোত্রীয় কুমির বা ঘড়িয়াল। এর মধ্যে মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়ালের বিলুপ্তি ঘটেছে। এখন শুধু লবণ পানির কুমিরের অস্তিত্বই আছে। এরা সাধারণত ৬০-৬৫ বছর পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। আর ৮০-১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।এই কেন্দ্র থেকে ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, পটুয়াখালী বন বিভাগ ও সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালে শতাধিক কুমির অবমুক্ত করার পর বর্তমান কেন্দ্রে কুমিরের সংখ্যা ২৭৭টি।

তবে কুমিরের ৫৫টি বাচ্চা শেয়ালে নিয়েছে বলে বন বিভাগ সিনিয়র কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন বিভাগের আরেক কর্মচারী জানান, করমজলে শেয়ালের আনাগোনা নেই। এছাড়া শিয়ালে কুমিরের বাচ্চা নিয়ে গেলে কোনো সিম্পটম (রক্ত বা কুমিরের বাচ্চার ছিন্নভিন্ন শরীর) থাকত, সেটাও নেই। তাছাড়া শিয়ালের পক্ষে একরাতে অতগুলো কুমিরের বাচ্চা খাওয়াও সম্ভব নয়। বন বিভাগের ওই কর্মচারীর ধারণা, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে কুমিরের বাচ্চাগুলোকে পাচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে করমজল প্রজননকেন্দ্রের কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডিএফও স্যার মঙ্গলবার এ ব্যাপারে করমজলে এসেছিলেন। বাচ্চাগুলো বন্যপ্রাণী দ্বারা হত্যা হতে পারে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পর বিস্তারিত জানা যাবে।

পথে প্রবাসে/ সামিয়া ইসলাম।

You might also like

Leave a Reply

শিরোনাম