রাজধানী ঢাকার সবজির বাজারে জায়গা করে নিয়েছে রাজশাহীর স্থানীয় জাতের শাহী পেঁপে। কাঁচাতে সবজি ও পাকলে খুব মিষ্টি হবার কারণে এর চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকাসহ দেশের অন্য জেলাগুলোতে শাহী পেঁপের কদর থাকা এবং আর্থিকভাবে চাষিরা লাভবান হবার কারণে তুলনামুলক ভাবে রাজশাহীসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে বেড়েছে এর আবাদ।
কেবল রাজশাহীতেই গত বছরের তুলনায় ১৭৬ হেক্টর বেশি জমিতে পেঁপে আবাদ হয়েছে। আগামীতে আরো বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি করছে কৃষি বিভাগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবজি হিসেবে পেঁপের চাহিদা সব সময় রয়েছে। কিন্ত হাইব্রিড জাত হবার কারণে সাধারণ ভোক্তারা কিনতে তেমন একটা আগ্রহ দেখান না। যার কারণে ব্যবসায়ীরা দেশি জাতের পেঁপে বিক্রির দিকে ঝুঁকেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীর স্থানীয় জাতের পেঁপে শাহীর প্রতি আগ্রহটা বেশি বলে দাবি করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
কৃষকদের ক্ষেত থেকে পেঁপে কিনে বস্তাবন্দী করে ৪ থেকে ৫ জন মিলে ট্রাকে সরাসরি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারে বিক্রয়ের জন্য পাঠাচ্ছেন তারা। তবে সবচেয়ে বেশি পাঠানো হয় ঢাকায় বলে জানান তারা।
আর চাষিরা বলছেন, কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে এর যেমন দাম পাওয়া যায়। পাকলে দাম পাওয়া যায় আরো বেশি। তাছাড়াও পেঁপে পাকার জন্য কোনো ধরনের ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। গাছে পাকা অবস্থায় ব্যবসায়ীরা নিয়ে যান। সেই সময় বিঘায় কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করা সম্ভব হয়। মূলত কোনো ধরনের কেমিক্যাল ছাড়াই পাকা পেঁপে বিক্রি করা যায় বলে এর চাহিদা অন্যান্য জাতের তুলনায় রাজশাহীর শাহী জাতের প্রতি আগ্রহ দেখায় ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন রাজশাহী জেলা থেকে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ট্রাক পেঁপে ঢাকা যায় বলে দাবি করছেন তারা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৫/৭ বছর থেকে রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, যশোর, কুষ্টিয়া, মাগুরা ও পাবনায় শাহী জাতের পেঁপে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। এসব জাতের পেঁপে ক্ষেত থেকে কৃষকরা যাতে ভালো ফলন পেতে পারে, এজন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। এর ফলনও ভালো। হেক্টর প্রতি কমপক্ষে ১৮ টন উৎপাদন হয়। যা অন্যান্য জাতের তুলনায় অনেক বেশি।
রাজশাহীর নারিকেলবাড়িয়া এলাকার পেঁপে চাষি জামাল বলেন, তার ৬বিঘা জমিতে শাহী জাতের পেঁপের আবাদ করেছেন। পেঁপে ধরার পর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে পেকে যায়। এর মাঝে কমপক্ষে ৪/৫ বার পেঁপে বিক্রি করা যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিজেরাই সরাসরি জমি থেকে পেঁপে কিনে নিয়ে যান। ঢাকার ব্যবসায়ীরা তাদের সাথেই যোগাযোগ করে নিজের চাহিদা মোতাবক পেঁপে নিয়ে থাকেন।
তিনি আরো জানান, প্রতিদিন ব্যবসায়ীরা সকালের দিকে জমি থেকে পেঁপে নিয়ে বিকেল হতে না হতে ঢাকার উদ্দেশ্যে নিয়ে যান। ইতিমধ্যে তিনবার তার বাগান থেকে ব্যবসায়ীরা পেঁপে নিয়ে গেছেন। এতে করে প্রায় ৫০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রয় করেছেন। পাকার সময় আরো বেশি পাবেন।
সবমিলিয়ে তার আবাদকৃত জমি থেকে কমপক্ষে বিঘা প্রতি ৪০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
রাজশাহীর খড়খড়ি এলাকার পেঁপে ব্যবসায়ী আব্দুর রশীদ জানান, দু’বছর থেকে পেঁপের ব্যবসা করছেন। সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ বস্তা নিয়ে যান। রাজশাহী থেকে ঢাকার আড়ৎদারদের পৌঁছা পর্যন্ত প্রতি বস্তায় খরচ হয় ৫০০ টাকা। প্রতিদিন ঢাকার চৌরাস্তা, বাইপাস, যাত্রাবাড়ীর কাঁচাবাজারে রাজশাহীসহ আশেপাশের জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা পেঁপে নিয়ে ঢাকা যান।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষক প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা শামসুল হক জানান, ঢাকার সবজি বাজারে শাহী পেঁপের চাহিদা বাড়ার সাথে আবাদও বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার ১৭৬ হেক্টর বেশি জমিতে পেঁপের আবাদ হয়েছে। গত বছর ৮৮৫ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ হয়েছিল। আর এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬১ হেক্টর।
তিনি আরো জানান, প্রতি হেক্টরে পেঁপে উৎপাদন হয় ১৭ দশমিক ৮ টন। জেলার দূর্গাপুর, পুঠিয়া, পবা এলাকায় সবেচেয় বেশি পেঁপে আবাদ হয়ে থাকে। কৃষকরা যাতে পেঁপের ভালো ফলন পায়, এ জন্য তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
চাহিদা থাকায় ও লাভজনক হওয়ায় পেঁপের ভালো ভালো জাত বের হওয়ায় সত্ত্বেও কৃষকরা স্থানীয় জাতের বেশি আবাদ করছেন বলে জানান তিনি।
পথে প্রবাসে/সামিয়া ইসলাম