কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন সম্মাননা দেবে তিন’শ স্বেচ্ছা রক্তদাতাকে

তিন শতাধিক স্বেচ্ছা রক্তদাতাকে সম্মাননা প্রদান করবে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। ১০ থেকে ৫০ বার পর্যন্ত স্বেচ্ছায় রক্তদান করে জনসেবা করায় তিন শতাধিক স্বেচ্ছা রক্তদাতা ব্যক্তিকে এই সম্মাননা প্রদান করা হবে।

আগামীকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় কাকরাইলের আইডিইবি ভবনে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই সম্মাননা প্রদান করা হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

প্রসঙ্গত, ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে একযুগের যাত্রায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন গড়েছে ৩ লাখ ১৩ হাজার স্বেচ্ছা রক্তদাতার সুসংগঠিত ডোনার পুল। যাদের মধ্যে অর্ধ লক্ষাধিকই নিয়মিত রক্তদাতা, তারা অঙ্গীকার করেছেন আজীবন রক্তদানে।

জীবন বাঁচানোর জন্যে এ পর্যন্ত কোয়ান্টাম দিয়েছে সাড়ে ৯ লাখের বেশি ব্যাগ রক্ত ও রক্ত উপাদান। গত বছরে (২০১৭ সাল) কোয়ান্টাম দিয়েছে ৯৯ হাজার ২৭০ ব্যাগ রক্ত। দেশে মোট রক্তচাহিদার ৫ ভাগের ১ ভাগ এখন মেটাচ্ছে কোয়ান্টাম।

এ বিষয়ে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচির কো-অর্ডিনেটর ড. মনিরুজ্জামন বলেন, আমাদের দেশে ভালো কাজের জন্য মানুষ সম্মাননা পায় না। ভালো কাজকে সম্মান জানানোর জন্য কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ২০০৩ সালে থেকে এ সম্মাননা দিয়ে আসছে। এটা মূলত ডোনারদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য যাতে তারা ৬০ বছর পর্যন্ত সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে রক্ত দিতে পারে।

তিনি আরো বলেন, একজন ডোনারের দেওয়া যে রক্তটুকু আরেকটি জীবন বাঁচাচ্ছে, সেটি তার নিজের জন্যে অপ্রয়োজনীয়, বাড়তি। কারণ ৫০ কেজি ওজনের পূর্ণবয়স্ক একজন পুরুষের শরীরের ১৩০০ মিলিলিটার রক্তই বাড়তি, নারীদের ক্ষেত্রে এটা ৮০০ মিলিলিটার। আর রক্ত দিতে এলে একজন ডোনারের কাছ থেকে নেওয়া হয় মাত্র ৩৫০-৪০০ মিলিলিটার রক্ত, যা এই বাড়তি রক্তের অর্ধেকেরও কম। আর এ ক্ষয় পূরণ হয়ে যায়ও খুব দ্রুত।

রক্ত দিলে উপকার মেলে

১. মিলার-কিস্টোন ব্লাড সেন্টারের এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা বছরে দুই বার রক্ত দেয়, অন্যদের তুলনায় তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। বিশেষ করে ফুসফুস, লিভার, কোলন, পাকস্থলী ও গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি নিয়মিত রক্তদাতাদের ক্ষেত্রে অনেক কম বলে দেখা গেছে। চার বছর ধরে ১২০০ লোকের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়।

২. সিএনএন পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, রক্তে যদি লৌহের পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে রক্ত ঘন হয়, কোলেস্টেরল তৈরি হওয়ার হারও ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। ফলে এর বেশি মাত্রার উপস্থিতি হার্ট এবং সার্কুলেটরি সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। গবেষকদের ধারণা, রক্ত দিলে দাতার শরীরে উচ্চমাত্রার লোহার স্তর কমে যায়।

৩. জার্নাল অব দি আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিত এই রিপোর্টটিতে বলা হয়, ৪৩ থেকে ৬১ বছর বয়সী ব্যক্তিরা ছয় মাসে অন্তত একবার রক্ত দিলে তাদের হৃদরোগ বা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। ফিনল্যান্ডের ২৬৮২ জনের ওপর একটি গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, যারা নিয়মিত রক্ত দেয় তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৮৮ শতাংশ কম এবং স্ট্রোকসহ অন্যান্য মারাত্মক হৃদরোগের ঝুঁকি ৩৩ ভাগ কম।

৪. রক্তদান করার সাথে সাথে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত বোন ম্যারো নতুন কণিকা তৈরির জন্যে উদ্দীপ্ত হয়। দান করার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়, আর লোহিত কণিকার ঘাটতি পূরণ হতে সময় লাগে চার থেকে আট সপ্তাহ। আর এই পুরো প্রক্রিয়া আসলে শরীরের সার্বিক সুস্থতা, প্রাণবন্ততা আর কর্মক্ষমতাকেই বাড়িয়ে দেয়।

৫. রক্ত দিতে এসে একজন রক্তদাতা তার সার্বিক সুস্থতাকে যাচাই করে নিতে পারেন। ফলে প্রতি চার মাসে এক বার করে বছরে তিন বার হয়ে যাচ্ছে তার ব্লাড প্রেশার, পালস লেভেল থেকে শুরু করে পাঁচটি রক্তরোগের স্ক্রিনিং যা তাকে আশ্বস্ত করে তার সুস্থতা সম্পর্কে। প্রতি পাইন্ট (এক গ্যালনের আট ভাগের এক ভাগ) রক্ত দিলে ৬৫০ ক্যালরি করে শক্তি খরচ হয়। অর্থাৎ ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

You might also like

Leave a Reply

শিরোনাম